প্রিন্ট এর তারিখঃ নভেম্বর ১৬, ২০২৫, ৬:০৪ পি.এম || প্রকাশের তারিখঃ অক্টোবর ১, ২০২৫, ১০:২৬ পি.এম
দাম্পত্য অনেক দিন যাবৎ থেকে একটা খুব প্রচলিত সমস্যা নিয়ে লেখার ইচ্ছা পোষণ করছিলাম
দাম্পত্য
অনেক দিন যাবৎ থেকে একটা খুব প্রচলিত সমস্যা নিয়ে লেখার ইচ্ছা পোষণ করছিলাম। আমি সচারচর প্রেম ভালবাসা, অথবা দাম্পত্য সম্পর্কের জটিলতা এই প্রসঙ্গগুলো থেকে সুবিধাজনক দূরত্ব বজিয়ে রেখে লেখার বিষয়বস্তু নির্বাচন করে থাকি।কারন একটাই, পাছে পাঠক না ভেবে বসেন আমার লেখার তাবৎ সমস্যার উৎস আমার নিজের ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতা। অভিজ্ঞতা ব্যাক্তিগত হোক অথবা সংগৃহীত হোক, কখনো কখনো সমাজের প্রতি দায় বদ্ধতা থেকেও কাউকে না কাউকে এগিয়ে এসে মুখ খুলতে হয়, সেই এগিয়ে আসার তাগিদ থেকেই আজকের লেখাটির আয়োজন!
দাম্পত্য সম্পর্কে চির, অবিশ্বাস,হতাশা, ব্যর্থতা, তিক্ততা, অসহনীয়তা এসবই যেন আজকাল সম্পর্কের একটা অবধারিত পর্বে পরিণত হয়েছে। এই তিক্ততা থেকে বেড়িয়ে আসা যেমন সহজ না, তেমনই তিক্ততাকে অবধারিত অনুষঙ্গ হিসেবে বয়ে জীবন যাপনও অসম্ভব হয়ে পড়ে। এহেন সম্পর্ক স্বামী বা স্ত্রী কারোর জন্যই সুখকর হবার কোন কারন নেই, তারপরেও যারা ঝুলে থাকে, তারা জীবন বিসর্জন দিয়ে অস্বাস্থ্যকর ভাবে বেচে থাকে মাত্র । কিন্তু এই বিসর্জন আদৌ কি কোন মঙ্গল বয়ে আনে নাকি কেবল জীবনের মত সবচাইতে মূল্যবান আশীর্বাদটিকে অভিশাপে পরিনত করে মাত্র!
বৈবাহিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে দুইজনের মানসিক অবস্থান সমপর্যায়ের না হলে অদূর ভবিষ্যতে তার খেসারৎ দিতেই হয়। পুরনো মানসিকতার অথবা অল্প শিক্ষিত, অথবা এক্সপোসার সীমিত থাকলে মানসিকতা কুয়োর ব্যাঙের মত রয়ে যায়। সেক্ষেত্রে একটা ব্যাবধান নিজেদের অজান্তেই তৈরি হয়ে যায়। দ্বিতীয়ত আমাদের মত পুরুষ শাষিত সমাজে স্বামীদের অর্থনৈতিক অথবা সামাজিক অবস্থান যদি নড়বড়ে হয় , যেখানে নির্বোধ অথবা অযোগ্য যাই হোক না কেন, আধিপত্যের কল কাঠি নাড়াবার দায়িত্ব পুরুষদের উপরেই বর্তায়, তাই যোগ্যতার মাপকাঠিতে পিছিয়ে থাকা অনুভূতিহীন স্বামীদের প্রতি মহিলাদের মানসিক নির্ভরতা এবং সম্মান প্রদর্শনের জায়গাটি নড়বড়ে হলেও নেহায়েত প্রথা প্রচলন করেই মহিলারা অবলীলায় নিজের মালিকানা কোন কারন ছাড়াই স্বামীর হাতে তুলে দেয় । স্বামী হিসেবে ধর্মীয় অথবা সামাজিক দায়িত্ব পালনের যোগ্যতা থাকুক বা নাইবা থাকুক, যেন স্ত্রীর গতিবিধি নির্ধারনই একমাত্র গুরু দায়িত্ব হয়ে দাড়ায় স্বামীটির কাছে। গায়ের জোড়ে যে আস্থা অর্জন অথবা অধিকার অর্জন সম্ভব না এই সামান্য বোধ টুকু যেসব পুরুষদের থাকেনা, তাদের সুসম্পর্ক স্থাপনে কোন যোগ্যতা নেই, বলা বাহুল্য। তাবৎ ব্যাবধান, না প্রাপ্তি মেনে নিয়েও যেসব মেয়েরা অপদার্থ, অনুভুতিশুন্য স্বামীদের সাথেই থেকে যাওয়া সাব্যাস্ত করে, সেক্ষেত্রে স্বামীদের ঘটে বিন্দু মাত্র মস্তিষ্ক থাকলে সম্পর্ক জীবন্ত রাখার জন্য কখনো সখনো তৎপর হবার প্রয়জনীতা অনুভব করা উচিৎ। আমাদের দেশের মধ্যবিত্ত পরিবারের মহিলারা মানসিক ভাবে যে কি পরিমান নির্যাতিত তা তাদের সাথে সামান্য ঘনিষ্ট আলাপেই বের হয়ে আসে। শুধু কি নির্ভরশীল মহিলারা? যেসব মহিলারা আপাদমস্তক আত্মনির্ভরশীল, তারাও তো কম নির্যাতনের স্বীকার হয়না। বেশীরভাগ স্থূল বুদ্ধির প্রাগৈতিহাসিক (?)মানসিকতার স্বামীদের কোন ভ্রুক্ষেপ থাকেনা, স্ত্রীর মানসিক চাহিদা পুরনের ব্যাপারে। শারীরিক স্পর্শ, আদর, ভালোবাসা এগুলো কোন অবাঞ্ছিত বা বাড়তি চাহিদা না, এই কঠিন জীবন সংগ্রামে একটু ভালোবাসার স্পর্শ অনেক মালিন্য, অনেক না প্রাপ্তি কে ধুয়ে দিতে পারে। অনেক ক্ষত কে মুছে দিয়ে সম্পর্ককে কিছুটা হলেও অর্থবহ করে রাখতে পারে। কি করে এই সভ্য যুগে এসেও মানুষ ধরে নেয় সম্পর্কের জন্য জীবন, জীবনের জন্য সম্পর্ক নয় , তা বোধগম্য হয়না। একই ছাদের নীচে একজন অন্যজনের কাছে মৃত হয়ে বেঁচে থাকার এই কালচার আমার বড় অপছন্দের!
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত